সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ || ৮ পৌষ ১৪৩১

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ২২ নভেম্বর ২০২৪

আরও বাড়তি দামে আলু, স্বস্তি নেই সবজিতেও

আরও বাড়তি দামে আলু, স্বস্তি নেই সবজিতেও
ছবি : সংগৃহীত

বাজারে আলুর দাম আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহে দুই দফা বেড়ে হয়েছে প্রতিকেজি ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৭০ টাকা। আর গত মাসে প্রতিকেজি আলুর দাম ছিল ৬০ টাকা। আলুর সঙ্গে কিছু সবজির দামও কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দেখা গেছে। তবে স্থিতিশীল আছে ডিম ও মুরগির দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রামপুরা বাজারে রহিম মিয়া নামে এক বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, গত শুক্রবারও বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা মঙ্গল-বুধবার এসে ৫ টাকা এবং গতকাল আরও ৫ টাকা বেড়েছে। ফলে সপ্তাহের মধ্যে আলুর কেজি ১০ টাকা বেড়েছে।

অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতারা জানান, এখন পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলু ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা ছিল। আলুর দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর মৌসুম এখন একবারে শেষদিকে। প্রতি বছর এ সময় দাম বাড়ে। তবে এ বছর শুরু থেকে আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এরপর এখন বেড়ে আরও অস্থিতিশীল হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ভারত থেকে আলু আসছে, তারপরও আলুর সংকট আছে। গত কয়েকদিন হিমাগারগুলোতে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৭ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।
আলুর আড়তদার সাইফুল রহমান বলেন, হিমাগারে আলুর সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বেড়েছে। মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, রংপুরে আলুর খুব সংকট চলছে, পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর অতিবৃষ্টি ও ঢলে দুই দফায় আলুর বিজ নষ্ট হওয়ায় সারা বছর আলুর দামে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।

এদিকে কিছু বাজারে আলু এখনো ৭০ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি করা আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় আলু বেশিরভাগ দোকানে দেশি নতুন আলু বলে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে গত মাসের মতো চড়া না হলেও সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে টমেটো-গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। বাড়তি আছে বরবটি, করলা, শিমের মতো আরও কিছু সবজি, যা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পটল, ঢ্যাঁড়স, পেপে কেনা যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।

একজন ক্রেতা নুরুল করিম বলেন, এক সপ্তাহ আগেই বেগুন ও বরবটির দাম ২০ টাকা কম ছিল। এখন বেড়েছে। ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলো কিছুটা কমেছিল, এখন আবার বাড়ছে।

অবশ্য কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজারে সবজির এ দাম আরও কিছুটা কম। অন্যদিকে কলমিশাক, লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন শাকের দামও ৫ টাকা করে (মুঠিতে) বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

অন্যদিকে মসলা পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেশি। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় ও আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আদা, রসুন ও আলুর দাম আগের মতোই রয়েছে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাতেও সবজির দামে খুব একটা হেরফের ঘটেনি, আগের মতোই রয়েছে অধিকাংশ সবজির দাম।

গতকাল সরেজমিনে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলকপি ও পাতাকপি পিস ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি ১২০ টাকা, লাউ পিস ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে কেজি ৫০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা ও টমেটো ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সবজির দাম বেড়েছে ও কমেছে। গত সপ্তাহে কুমড়ো বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি, যা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বেগুনের দাম ছিল ৭০ টাকা, যা এ সপ্তাহে ৬০ টাকা।

আবার গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বেড়েছে বরবটির দাম। ৬০ টাকা কেজির বরবটি এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। বেড়েছে শসার দামও। গতসপ্তাহে শসা ৬০ টাকা, এ সপ্তাহে যার দাম ১০০ টাকা।

বিক্রেতা মশিউর বলেন, বাজারে শীতের সবজির সাপ্লাই ভালো আছে, তাই দাম কিছুটা কম। শীত বাড়লে সাপ্লাই আরো বাড়বে, তখন দাম আরও কমতে পারে। আরেক বিক্রেতা জালাল আহমেদ বলেন, কিছু সবজি ছাড়া প্রায় সব সবজির দাম কমের দিকে আছে, সামনে আরও কমে যাবে।

আগ্রহ নিয়েই শীতের সবজি কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। বাজারে আসা ক্রেতা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আগে শীতের সবজি আরও কম দামে কিনেছি। আশা করছি শীত আসলে দাম আরেকটু কমে যাবে, তখন আমরা একটু স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারব।’

স্থিতিশীল গরু-খাসি-মুরগি

বাজারে গরু, খাসির মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও আগের সেই বাড়তি দামেই আটকে আছে সব ধরনের মাছ। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, মাছের ফিডের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই বাজারে সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে একটু বেশি দামে, যা আর কমেনি।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাংস, মুরগি, মাছের দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। গতকাল বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়, সোনালির কেজি ২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০, কক ৩০০ টাকা কেজি। পাশাপাশি দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বাজার ভেদে ৭৫০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।

তবে বাজারে সব ধরনের মাছ বাড়তি দামেই আটকে আছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চাষের কই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়, পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাঁতল ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা, গলসা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া রুই প্রতিকেজি ৩৬০ টাকা, রুপচাঁদা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মহাখালী বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শহীদুজ্জামান মীর। মাছের বাড়তি দামের বিষয়ে তিনি বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি সেই কথা আর নেই। এখন বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম মাছের। সাধারণ ক্রেতারা দুই একটি কমদামি মাছ ছাড়া, অন্য কোনো মাছ এখন আর কিনতে পারে না। কমদামি মাছ বলতে চাষের কই, পাঙাশ, তেলাপিয়া। তবে এসব মাছেরও এখন দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। এগুলো ছাড়া অন্য কোনো ধরনের ভালো মাছ কেনার সামর্থ্য আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের নেই। তাই ঘুরে ফিরে প্রতি সপ্তাহে এ ধরনের মাছই আমরা কিনি।

রাজধানীর মগবাজারের আরেক ক্রেতা মোজাম্মেল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম চেয়ে বসে থাকে। মাছের দাম যে এত বাড়তি, তবুও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোনো বাজার মনিটরিং, নিয়ন্ত্রণ, উদ্যোগ গ্রহণ করা কিছুই চোখে পড়ে না। বছরের পর বছর মাছের দাম এমন বাড়তি যাচ্ছে কিন্তু কেউ, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বাজারে এমন কোনো মাছ নেই যার দাম বাড়তি না। গরুর মাংস খাওয়া যেমনি মানুষ বাদ দিয়েছে, তেমনি এত বেশি দাম হলে সাধারণ মানুষ মাছও খেতে পারবে না।

মাছের বাড়তি দাম বিষয়ে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে যখন থেকে মাছের খাবারের দাম বেড়েছে, তখন থেকেই মাছের দাম বাড়তি। এরপর থেকে সেভাবে আর দাম কমেনি। অল্প কিছু দাম ওঠানামা করে পাইকারি বাজারে। সেক্ষেত্রে আমরা যখন যেদিন যে দামে মাছ কিনতে পারি, খুচরা বাজারে একটু লাভ রেখে তেমন দামেই বিক্রি করি। পাইকারি বাজার থেকে মাছ কেনার পর বাজার খরচ, পরিবহন খরচ, লেবার খরচ, দোকান ভাড়া সবকিছুর সঙ্গে সমন্বয় করে পাইকারি বাজারের যে কিছুটা বেশি দামে আমরা খুচরা বাজারে বিক্রি করি। মূলত মাছ চাষি পর্যায়ে মাছের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যে কারণে তারা আগের চেয়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। আমরা যদি পাইকারি বাজার থেকে কম দামে মাছ কিনতে পারি, তাহলে খুচরা বাজারেও কম দামে মাছ বিক্রি করতে পারব।’