লন্ডনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সফর
পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি

লন্ডন, ১৭-২১ মার্চ ২০২৫: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মানসুর ১৭ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত লন্ডনে সরকারি সফর সম্পন্ন করেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল—(১) বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে চলমান সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং (২) বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ডিজিটাল পেমেন্ট ইন্টারঅপারেবিলিটি বিষয়ক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা।
পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কূটনৈতিক তৎপরতা
গভর্নর ড. আহসান এইচ মানসুর বর্তমানে গঠিত "অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্স" এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি লন্ডনে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন এবং ইউকে-ভিত্তিক সরকারি ও বেসরকারি খাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
১৭ মার্চ:
-
যুক্তরাজ্যের সংসদ ভবনের পার্টকুলিস হাউসে ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (APPG) অন করাপশন’-এ অংশগ্রহণ: সভায় উপস্থিত ছিলেন এমপি জো পাওয়েল, রূপা হক এমপি, ব্যারোনেস উদ্দিন, সাবেক লর্ড চ্যান্সেলর ও বিচারমন্ত্রী আরট অন. অ্যালেক্স চাল্ক কেসি সহ বিভিন্ন অ্যান্টি-করাপশন এনজিও ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ইউকে সরকারের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “পাচারকৃত সম্পদ উদ্ধার শুধু আর্থিক নয়, এটি একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার।” -
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসে (FCDO) এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট এমপির সঙ্গে বৈঠক: বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান সংস্কার, ব্যাংকিং খাতের গুণগত পর্যালোচনা এবং ICAR ও IACCC-এর সহায়তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
১৯ মার্চ:
-
বাংলাদেশ অ্যাসেট রিকভারি সেমিনার: লন্ডনে আয়োজিত সেমিনারে প্রায় ৩০টি আইনজীবী প্রতিষ্ঠান, ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর ও লিটিগেশন ফান্ডার উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর জানান, এপ্রিলের মধ্যে একটি ‘টার্মস অব রেফারেন্স (ToR)’ প্রকাশ করা হবে যার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করতে পারবে।
-
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকার: আল জাজিরা, ফিনান্সিয়াল টাইমস, গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল প্রভৃতি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গভর্নর বাংলাদেশের প্রচেষ্টার আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেন।
-
বিশ্বের তিনটি বৃহৎ লিটিগেশন ফান্ডারের সঙ্গে বৈঠক: এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অ্যাসেট রিকভারি মামলায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যাদের সম্মিলিত সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রায় ৫ কোটি মার্কিন ডলার।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ডিজিটাল পেমেন্টে অগ্রগতি
১৮-২১ মার্চ:
-
গেটস ফাউন্ডেশনের কর্মশালা: ১২ জন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি এ কর্মশালায় অংশ নেন। আলোচ্য বিষয় ছিল—ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তির মৌলিক ধারণা, ‘মোজালুপ’ প্ল্যাটফর্মের সম্ভাব্য ব্যবহার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা। শিগগিরই ‘মোজালুপ’ গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
-
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির CCAF-এর সঙ্গে কর্মশালা: ‘শ্যাডো ব্যাংক’ হ্রাস করে এজেন্ট ব্যাংক বিস্তারে কৌশল, এবং বাংলাদেশে ‘Bangladesh Center for Alternative and Inclusive Finance’ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
-
GSMA-র সঙ্গে কর্মশালা: নগদহীন অর্থনীতির সম্ভাবনা, QR কোড, ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ব্যবহারে গতি আনার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
-
লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস (LSE) এর IGC-র সঙ্গে বৈঠক: গভর্নর ও IGC-র কর্মকর্তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার, ব্যাংকিং সেক্টরের ইতিহাসভিত্তিক ডেটাবেস গঠন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের পুনর্গঠনসহ বিভিন্ন গবেষণামূলক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এ সফর আন্তর্জাতিকভাবে দেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতিশ্রুতি জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার এবং ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।