সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ || ৮ পৌষ ১৪৩১

Advertisement

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৩:২০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধে ছাড় দেওয়া হবে না: ইরান

নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রতিশোধে ছাড় দেওয়া হবে না: ইরান
ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বদলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, এ হত্যার প্রতিশোধে ছাড় দেওয়া হবে না। শিয়া ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান এ নেতা নিহত হওয়ার পর শনিবার এ কথা বলেন তিনি। খবর বিবিসি 

হাসান নাসরুল্লাকে ‘শহীদ’ উপাধি দিয়ে খামেনি বলেন, তাঁর চিন্তাধারা ও দেখিয়ে যাওয়া পথ অটুট রাখা হবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হাসান নাসরাল্লাহ একক কোনো ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি ছিলেন একটি পথ ও একটি চিন্তাধারা। এই পথ অব্যাহত থাকবে। শহীদের রক্তের প্রতিশোধে ছাড় দেওয়া হবে না।

ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক: এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের ভাগ্য নির্ধারণ করবে প্রতিরোধ যোদ্ধারা যার সামনে থাকবে হিজবুল্লাহ। 

হাসান নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আরও শক্তিশালী করবে: ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক বিবৃতিতে বলছেন, হাসান নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ড ‘প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আরও শক্তিশালী করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভুলে যাবে না যে এই সন্ত্রাসী হামলার নির্দেশ নিউইয়র্ক থেকে জারি করা হয়েছিল। নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

নিরাপদ স্থানে খামেনি: এদিকে নাসরাল্লাহকে হত্যার পর আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দেশের ভেতরে একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তেহরানের সর্বশেষ খবর সম্পর্কে অবগত দু’জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ৩১ জুলাই এক হামলায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হন। তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি। এর আগে মে মাসে ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। 

শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁকে হত্যা করার ইসরায়েলি দাবির কয়েক ঘণ্টা পর হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়। শনিবার বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে। একই সঙ্গে গাজা ও ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং লেবানন ও এর জনগণের সুরক্ষায়ও লড়াই অব্যাহত রাখবে।

১৯৯২ সাল থেকে হিজবুল্লাহর প্রধান হিসেবে ছিলেন নাসরাল্লাহ। তিনি একটি মিলিশিয়া বাহিনী থেকে হিজবুল্লাহকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বেসরকারি সামরিক বাহিনীতে পরিণত করেছেন। ইরানের রেভল্যুশনারি বাহিনীর সাহায্যে হিজবুল্লাহ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে বিশাল অস্ত্রশস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে, যার বেশির ভাগই ভূগর্ভে লুকিয়ে রাখা রয়েছে। 

শনিবার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, শুক্রবার বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে তাদের বিমান হামলায় নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন। এর পর নাসরাল্লাহর মৃত্যুর ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই হিজবুল্লাহর আল মানার টিভিতে পবিত্র কোরআনের বাণী সম্প্রচার শুরু করে। 

হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে নাসরুল্লাহকে ‘প্রতিরোধের কর্তা, ধার্মিক বান্দা, মহান, অমর শহীদ, মুজাহিদীন, বিশ্বাসী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে চলে গেছেন। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে হিজবুল্লাহকে বিজয় থেকে বিজয়ের দিকে নিয়ে গেছেন। বিবৃতিতে সমগ্র মুসলিম জাতি, সব মুক্ত ও নির্যাতিত জনগণের পক্ষ থেকে তাঁর ‘সম্মানিত এবং ধৈর্যশীল’ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স জানায়, হাসান নাসরাল্লাহকে টার্গেট করে চালানো হামলায় হিজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডার ও কয়েক সিনিয়র নেতা নিহত হয়েছেন। আইডিএফ বলছে, দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর সিনিয়র নেতারা যখন বৈঠক করছিলেন, তখন সেখানে হামলা চালানো হয়। এ জায়গাটি হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।ইসরায়েলি বাহিনী বেশ কয়েক দিন ধরে লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে। এতে শত শত লোক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল পুরোদমে হামলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে লেবাননে পেজার, ওয়াকিটকিসহ নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হিজবুল্লাহ নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের একের পর হামলা মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি করছে। এর মাধ্যমে তাদের মূল পৃষ্ঠপোষক ইরানকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে বলে লিখেছে বিবিসি। 

নাসরাল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পরিচিত এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ইসরায়েলের হাতে নিহত হওয়ার আশঙ্কায় বছরের পর বছর ধরে তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। নাসরাল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছে। ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষতি ও দুর্ভোগ ঘটাতে সক্ষম হিজবুল্লাহ। 

বিবিসি বলেছে, যুদ্ধের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা তেমন না থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এখন থেকে ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে ইরানসমর্থিত মিলিশিয়াদের বৃহত্তর সম্পৃক্ততা দেখবে বিশ্ব।