পোপের মৃত্যুতে দেওয়া শোকবার্তা প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল

রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু ও ভ্যাটিকান সিটি স্টেটের রাষ্ট্রপ্রধান পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট দিয়েছিল ইসরায়েল। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই বার্তা সরিয়ে ফেলা হয়।
ইসরায়েল সরকারের এক্স অ্যাকাউন্টে সোমবার পোস্ট করা একটি বার্তায় লেখা ছিল, ‘চির শান্তিতে ঘুমান, পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর স্মৃতি আশীর্বাদস্বরূপ হোক।’
হিব্রু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ইসরায়েলি কূটনৈতিক মিশনগুলোকে একই ধরনের সব শোকবার্তা মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং ভ্যাটিকানের দূতাবাসগুলোর শোকবইয়ে স্বাক্ষর না করতে বলা হয়েছে।
পোপের মৃত্যুতে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজোগ শোকবার্তা দিলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ বিষয়ে এখনো নীরব।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আইজ্যাক হেরজোগ লিখেছেন, ‘খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মহান আধ্যাত্মিক পিতা, মহামান্য পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে আমি খ্রিষ্টানদের প্রতি, বিশেষ করে ইসরায়েলে থাকা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছি। তিনি এক গভীর বিশ্বাসী এবং সীমাহীন সহানুভূতিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন। মানবতা ও শান্তির জন্য তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
জেরুজালেমের কেন্দ্রীয় ক্যাথলিক গির্জা ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্কেট পরিদর্শনে গিয়ে বিরোধী দলের পার্লামেন্ট সদস্য গিলাদ কারিভ বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার ও নেসেট (পার্লামেন্ট) থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা না দেওয়ায় আমি লজ্জিত। ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পক্ষ থেকে শোক জানাতে আমি এখানে এসেছি।’
এটি এমন এক প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যখন ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর কারণে ইসরায়েলে পোপের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে কেন্দ্র করে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে কথা বলে আসছিলেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে পোপ ফ্রান্সিস গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্পর্কে বলেছিলেন, এটা ‘যুদ্ধ নয়, বরং সন্ত্রাসবাদ’। এই মন্তব্যের পর জেরুজালেম পোস্টের সম্পাদক তাঁকে ‘হামাসের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনকারী’ বলে অভিযুক্ত করেন।
ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক অব জেরুজালেমের কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিজ্জাবাল্লাকে গাজা অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি না দিতে ইসরায়েল সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোপ তাঁর শাসনকালের শুরুতে বেথলেহেমের বিভাজক প্রাচীরের সামনে প্রার্থনা করেছিলেন। ওই দেয়াল পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন সংগ্রামকে তুলে ধরে। পোপ সেখানে প্রার্থনা করায় অনেক ইসরায়েলি ক্ষুব্ধ হয়েছিল।
চলমান যুদ্ধের সময়ও তিনি গাজা সিটির হোলি ফ্যামিলি নামের একমাত্র ক্যাথলিক গির্জার সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ রাখতেন।
গত সোমবার সকালে ভ্যাটিকানের বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় মারা যান পোপ ফ্রান্সিস। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হয়ে ভ্যাটিকানে ফিরেছিলেন ফ্রান্সিস। গত রোববার হুইলচেয়ারে বসে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার বারান্দা থেকে উচ্ছ্বসিত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে ইস্টারের শুভকামনা জানিয়েছিলেন। তার পরদিনই তার মৃত্যুর খবর আসে।
আর্জেন্টিনার ধর্মযাজক হোরহে মারিও বেরগোলিও ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ নির্বাচিত হয়ে ফ্রান্সিস নাম নেন।
রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।