সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ || ৮ পৌষ ১৪৩১

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩২, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

বিদ্যুৎ খাতে চুক্তি বাতিল অতটা সহজ নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ খাতে চুক্তি বাতিল অতটা সহজ নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা
ছবি : সংগৃহীত

বিদ্যুৎ খাতে চুক্তি বাতিলের কথা বলাটা সহজ হলেও তা থেকে বের হয়ে আসাটা অনেক ব্যয়বহুল বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, চুক্তি বাতিল অতটা সহজ নয়। নাইকো চুক্তি বাতিল করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে হয়েছে। তবুও অন্তর্বর্তী সরকার চ্যালেঞ্জটা নিয়েছে। এখন চুক্তিগুলো পর্যালোচনার মধ্যে আছে।

‘বাংলাদেশ জ্বালানি সমৃদ্ধি-২০৫০’ নিয়ে দ্বিতীয় জ্বালানি সম্মেলনে এ কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

আজ বুধবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে তিন দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন হয়েছে। সম্মেলনের আয়োজক কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বিত জোট বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি)।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, অনেকের বক্তব্যে আগের সরকারের কিছু চুক্তি বা প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো প্রথম থেকেই বিরোধিতার মুখে ছিল। যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেছে, সেগুলোর ঋণের বোঝাও টানতে হচ্ছে। বসিয়ে বসিয়ে টাকা দিতে হচ্ছে। আবার একই সময়ে জ্বালানি রূপান্তরেরও একটা চাপ আছে। যে ধরনের অসম চুক্তি হয়েছে, অস্বাভাবিক খরচে করা হয়েছে, তার দায় বহন করতে হচ্ছে। ‘ড‍্যামেজ কন্ট্রোল’ (ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ) করতেই সরকারের অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে।

সম্মেলনে বক্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকায় আবাসিক ভবনের ছাদে সোলার প‍্যানেল আছে। এটা কাজ করে কি না, তার তদারকি নেই। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিটা মূল মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। তবে অধিগ্রহণ করা অব‍্যবহৃত জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন অথবা বনায়ন করে কাজে লাগানো যেতে পারে।

সম্মেলনে জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা কারও বক্তব্যে শোনা যায়নি বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, জ্বালানি খাতে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন‍্য ৪০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। শুরুতে ১০টির জন‍্য দরপত্র ডাকা হচ্ছে। ধাপে ধাপে বাকিগুলোর দরপত্র আহ্বান করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নতুন করে তৈরি হবে। এ ছাড়া দেশে সৌরবিদ্যুৎ যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা উন্নয়নকর্মীরা উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলে ধরেন। তারা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের ক্ষতি হচ্ছে। এ কেন্দ্রের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি আছে। তাহলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাঁচতে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে কি না? বিকল্প থাকার পরও এ প্রকল্পের রাস্তা তৈরি করতে বেশ কিছু পরিবারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন একজন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৪ হাজার ২০০ পরিবার উচ্ছেদ করা হয়েছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল হয়েছে। পরিবারগুলোকে জমি ফিরিয়ে দেওয়া যায় কি না, তা জানতে চান একজন।

বিদ্যুৎ খাতে করা চুক্তি বাতিলের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী তামিম। তিনি বলেন, একটি প্রকল্প বন্ধ করতে গেলে ৮ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হবে, এটাই চুক্তি। অনেক চুক্তি দীর্ঘমেয়াদি। মেয়াদের আগে বাদ দিতে গেলেই আইনগত ঝামেলা আছে। আর্থিক জরিমানা তো আছেই।

ম তামিম আরও বলেন, সার্বক্ষণিক চলছে এখন সাত হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছয় হাজার মেগাওয়াটের মতো বড় কেন্দ্র বসিয়ে রেখে কেন্দ্রভাড়া দিতে হচ্ছে। এটা কি বাদ দেওয়া যাবে? গরমের সময় তো এগুলো লাগবে। সত‍্যিকার পরিকল্পনা করে এ খাত এগোয়নি। তাই রূপান্তরের ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন ও সাশ্রয়ে গুরুত্ব কম। এখানে মনোযোগ দিতে হবে।