মঙ্গলবার   ০৮ এপ্রিল ২০২৫ || ২৪ চৈত্র ১৪৩১

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ৬ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৩:৫০, ৬ এপ্রিল ২০২৫

৩৭% ট্যারিফ

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আমদানি পণ্যে শুল্কছাড় বিবেচনায় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আমদানি পণ্যে শুল্কছাড় বিবেচনায় বাংলাদেশ

ঢাকা, ৩ এপ্রিল – যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো কিছু নির্দিষ্ট পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কছাড় দেওয়ার চিন্তা করছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক থেকে স্বস্তি পাওয়া।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত দেশ, তারপরও এই শুল্ক থেকে রেহাই পায়নি।

এই প্রেক্ষাপটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) কার্যালয়ে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশে একটি কূটনৈতিক চিঠি পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয় এবং খসড়াও প্রণয়ন করা হয়। সরকার পক্ষ থেকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

খসড়াপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ শুধু শুল্ক ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবই নয়, একই সঙ্গে যেসব পণ্যে বর্তমানে শুল্ক নেই, সেগুলোর ওপর আগের মতোই শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে আগামী তিন মাসের জন্য নতুন শুল্ক কার্যকরের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হবে।

বৈঠকে জানানো হয়, কেবল শুল্ক বাধা নয়, অশুল্ক বাধা অপসারণেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত তুলায় ফিউমিগেশন শর্ত তুলে দেওয়া, সুতা গুদামজাত করার অনুমতি, এবং কৃষি ও প্রযুক্তিপণ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া ওয়ালমার্ট, শেভরন, মেটা, টেসলা ও বোয়িংয়ের মতো ফরচুন ৫০ তালিকাভুক্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের পরিকল্পনাও রয়েছে।

চিঠির খসড়ায় আমদানিযোগ্য চারটি সম্ভাব্য মার্কিন পণ্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে: ক্যালসিয়াম কার্বনেট, তাজা বা হিমায়িত গরুর মৃতদেহ, হাড়সহ ও হাড়বিহীন তাজা বা হিমায়িত গরুর মাংস।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করছে, যার মধ্যে রয়েছে কটন, সয়াবিন, তরল গ্যাস, সমুদ্রগামী জাহাজ ইত্যাদি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চিঠির খসড়া তৈরি হলেও কিছুটা সময় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ তিনি জানান, নতুন শুল্ক কার্যকরের ফলে বিদেশি ক্রেতারা চাপ সৃষ্টি করছেন এবং এই চাপ স্থানীয় সরবরাহকারীদের ওপর পড়ে যাচ্ছে। ফলে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যথাযথভাবে প্রস্তুত ছিল না, যেখানে ভিয়েতনাম ও ভারত আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।’

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে গড় শুল্ক ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। যদিও সমন্বয়যোগ্য কর বাদ দিলে কার্যত গড় শুল্ক দাঁড়ায় ২ দশমিক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর শুল্ক আরোপ করে, যেখানে মুদ্রা বিনিময় হার ও অশুল্ক বাধাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ ২,৫১৫ ধরনের মার্কিন পণ্য আমদানি করেছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্কহার ছিল ৬১১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ছিল শূন্য শতাংশ।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক, লেদার গুডস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি শামীম এহসান, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার এবং সানেম নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রমুখ।

সম্পর্কিত বিষয়: