রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫ || ৬ বৈশাখ ১৪৩২

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: ফখরুল

ট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এ দেশের মানুষকে ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশটা আমাদের, এর ভবিষ্যতও আমাদের নির্মাণ করতে হবে। আমেরিকা থেকে ট্রাম্প এসে ঠিক করে দেবেন না বা চীন থেকে সি এসেও এটা করে দেবেন না কিংবা ভারত থেকে মোদিও আমাদের ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। এ বিষয় আমাদের অন্তরে গেঁথে নিতে হবে।’

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে ভিডিও বার্তা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে বহু সমস্যা আছে, এর জন্মই হয়েছে বহুত্ববাদের মধ্য দিয়ে, এটা নিয়ে অনেকে ভুল–বোঝাবুঝি করেন। বহু চিন্তার মধ্য দিয়ে, অনেক চিন্তা এসে এখানে একসঙ্গে হয়েছে। স্বাধীনতার সময় আমাদের নেতা অনেকেই ছিলেন। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, মাহবুব উল্লাহ্ তখন বড় নেতা ছিলেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তখন আমাদের একেকজনের একেক চিন্তা ছিল। কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ কমিউনিজম, কেউ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা করেছেন। তারপর যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমরা সবাই এক হয়েছি এবং এক হয়ে লড়াই লড়েছি। আজ ২৪–এ একই ঘটনা ঘটেছে, বিভিন্ন চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা এসেছি, যেদিন ছাত্রদের ওপর গুলি শুরু হয়েছে, সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘এ লড়াইয়ে আমাদের অনেক ত্যাগ আছে, অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই আমাদের কয়েক হাজার তরুণ-তাজা প্রাণ চলে গেছে। তাঁদের ত্যাগের কারণেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, সুখী দেশের স্বপ্ন দেখছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘(সবাই) বলছেন, এত যে রক্তপাত হলো, এত রক্ত ঝরল, এত মায়ের বুক খালি হলো—কী হবে এর শেষ পরিণতি? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পরিণতি খুব ভালো হবে। কারণ, আমরা বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল ভালোর জন্য লড়াই করেছি এবং জয়ী হয়েছি। সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একেবারে ২৪–এর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সামনে থেকে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের ছেলেমেয়েরা এবং সেখানেই আমাদের শক্তি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা কথা কেউ বলেন না। আমাদের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ, বৈষম্য তো তাঁদের কাছে, পুরো বৈষম্য তো সেখানে। তাঁদের কথা বলা দরকার, তাঁরা হেসেখেলে তাঁদের কাজ করছেন এবং বাংলাদেশকে টেনে তুলে ধরছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি এর সুরাহা করা না যায়, তবে আরও বড় বিপদে পড়তে হবে। আমার মনে হয়, কৃষক ও কৃষির সঙ্গে জড়িতদের যদি আমরা এগিয়ে আনতে পারি, তাঁদের কাজ দিতে পারি, তাঁদের নতুন প্রযুক্তি দিতে পারি, তবে সমস্যাগুলো আমরা অতিদ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের আছে, বরাবরই আছে। দেড় শ বছর যখন এখানে ব্রিটিশরা শাসন করেছে (তখনো ছিল)। পলিটিক্যাল তর্ক করা আমাদের মজ্জাগত। আমরা চায়ের দোকানে বসে পলিটিক্যাল আলাপ করি।’

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করি, সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধান হবে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো চলে গেছে। আমি প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার বিশ্বাসও আছে, তিনি সফল হবেন। আসুন, সবাই মিলে তাঁকে সাহায্য করে আমরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করি। তবে একটা কথা, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই এবং গণতন্ত্রকে কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না—এটা চর্চা করতে হবে।’

সম্পর্কিত বিষয়: