সরকার গঠন করলে শিক্ষিত বেকার ভাতা চালু করবে বিএনপি: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা যেটা চেষ্টা করছি, যাঁরা চাকরি পাননি তাঁদের জন্য একটা শিক্ষিত বেকার ভাতার ব্যবস্থা করার। এটা এক বছর পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে সরকার তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য চেষ্টা করবে। শিক্ষিত বেকারেরাও তাঁদের কর্মসংস্থানের চেষ্টা করবেন।’
আজ বুধবার বিকেলে রংপুর, নীলফামারী ও সৈয়দপুর জেলার (বিএনপির সাংগঠনিক জেলা) নিয়ে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে বিএনপির ৩১ দফাসংক্রান্ত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এমন ভাবনার কথা জানান তারেক জিয়া।
বিগত সরকারের সময়ে সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে দলীয়করণ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলের তরুণ নেতৃত্ব ছিল, তরুণ সহকর্মী ছিলেন, তাঁদের অনেকেই আন্দোলন–সংগ্রামের কারণে বয়স পার হয়ে গেছে। এটার ভুক্তভোগী শুধু ছাত্রদল নয়, এর বাইরে অনেক মানুষ আছেন। যাঁরা স্বৈরাচারের রাজনীতি সমর্থন করতেন না। কিন্তু সরকারের পক্ষে না থাকায় তাঁদেরও চাকরি খেয়েছে বা চাকরি দেয়নি। এ বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘সংসদে নারীদের জন্য যে ৫০ আসন আছে, সেগুলো বৃদ্ধি করা উচিত বলে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা দলের থেকে প্রস্তাব দিয়েছি, ৫০টিকে বৃদ্ধি করে ১০০টিতে নিয়ে যেতে চাই। এটি আলোচনার বিষয়, যে গণতান্ত্রিক দলগুলো একসঙ্গে আন্দোলন করেছিলাম, আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করব। এটি নির্বাচিত সংসদ যেদিন বসবে, সেদিন থেকে হবে, নাকি আলোচনার ভিত্তিতে, এ বিষয়ে বিল পাস হবে, সেটা আমরা বসে ঠিক করব।’
জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘুদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংক্ষরণের দাবি নিয়ে প্রশ্ন করেন সৈয়দপুর বিএনপির সহসভাপতি সুমিত কুমার আগারওয়ালা। তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কোনো মানুষকে তাঁর ধর্ম–বর্ণ দিয়ে বিবেচনা করি না যাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা তাঁদের বাংলাদেশি হিসেবে দেখি। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘিষ্টের বিষয় নেই। রাষ্ট্র ও সংবিধান একজন নাগরিককে যে অধিকার দেয়, সেই বিচারে সবার সমানভাবে সবকিছু পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’
তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও রংপুর বিভাগের অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চান রংপুর মহানগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর ইসলাম। তাঁর প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘রংপুর বিভাগের তিন কোটি মানুষ কম-বেশি ওতপ্রোতভাবে তিস্তার সঙ্গে যুক্ত। কাজেই তিস্তা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। যেভাবেই হোক আমাদের তিস্তার সমস্যার সমাধানে একটি জায়গায় পৌঁছাতে হবে। আমরা দেখেছি, বিগত ১০-১৫ বছর তিস্তাকে নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। এই রাজনীতি মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করেনি। বিএনপির আয়োজনে লালমনিরহাটে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনে দেশ ও মানুষের স্বার্থে এগিয়ে এসে বিষয়টি তুলে ধরেছে। বিএনপির এ উদ্যোগ প্রমাণ করে আগামী দিনে বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে যেকোনো মূল্যে, যেভাবে করলে মানুষের জন্য ভালো হবে, আমরা সেভাবেই তিস্তা প্রকল্প গ্রহণ করব।’
অন্য আরেক নেতার প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান জানান, প্রতিবছর একজন কৃষককে একটি ফসল চাষে খরচ বাবদ পুরোপুরি সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘একটা কৃষক বছরে তিন বা দুই ধরনের ফসল করলে একটা ফসলের ফুল সাপোর্ট আমরা দিতে চাইছি। এটা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষককে দিয়ে আমরা শুরু করব। যাঁদের ১০ বিঘা বা ৭ বিঘার ওপরে জমি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে আমরা মনে করি না যে দরকার আছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির উদ্যোগে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা আজ বুধবার বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শুরু হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু)। সঞ্চালনা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় আলোচক ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবিব (দুলু), বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোরশেদ হাসান খান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সহ–আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, নাটোর জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক ফারজানা শারমিন।